মা-বাবাসহ পরিবারের চারজনকে হত্যার অভিযোগ: কানাডায় বাংলাদেশি গ্রেপ্তার


কানাডার টরন্টোতে মা-বাবাসহ পরিবারের চার সদস্যকে হত্যার অভিযোগে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক তরুণকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।

                                             অভিযুক্ত মিনহাজ
২৮ জুলাই বিকাল ৩টার দিকে টরন্টোর মারখাম উপ-শহরে ক্যাসেলমোর এভিনিউয়ের বাসায় হত্যাকাণ্ডের খবর আসে বলে ইয়র্ক পুলিশের মুখপাত্র অ্যান্ডি প্যাটেনডেন জানিয়েছেন। গ্রেপ্তারকৃত মিনহাজ জামানের বয়স ২৩ বছর। বাবা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বাংলাদেশের টাঙ্গাইল থেকে কয়েক দশক আগে কানাডায় পাড়ি জমান। মা মমতাজ মুক্তা জামান, ছোটবোন ম্যালিসা (২১) ও নানিকে নিয়ে একসঙ্গেই তারা ওই বাসায় বসবাস করতেন। সোমবার তাকে টরন্টোর নিউমার্কেট আদালতে হাজির করা হলে অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে হেফাজতে পায় পুলিশ। শুক্রবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে মিনহাজকে আবার আদালতে উপস্থাপন করা হবে।

প্যাটেনডেন গণমাধ্যমকে বলেছেন, রোববার বেলা ৩টায় তাদের কাছে একটি ফোন আসে। ফোনের অপর প্রান্ত থেকে জানানো হয়, ক্যাসেলমোর এভিনিউয়ের ওই বাড়িতে কিছু মানুষ আহত হয়ে পড়ে আছে। পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে বাড়ির দরজায় একজনকে পায় যিনি হত্যার কথা স্বীকার করেন। পরে বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে চারটি মৃতদেহ পায়।
প্রতিবেশীদের উদ্ধৃত করে টরন্টোর গণমাধ্যমগুলো বলছে, স্বল্পভাষী, শান্তশিষ্ট মিনহাজ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটি থেকে ঝরে পড়ার পর ধীরে ধীরে নিভৃতচারী হয়ে পড়েন। শুধু নিকটস্থ মল এবং ব্যায়ামাগারে সময় কাটাতেন তিনি। হত্যাকাণ্ডের খবর জানিয়ে মিনহাজ নামে একটি আইডি থেকে অনলাইন গেমারদের নেটওয়ার্কিং সাইট ‘ডিসকর্ডে’ হত্যাকাণ্ডের ঘোষণার সঙ্গে নিহতদের ছবি পোস্ট করা হয় বলে অন্তত দুজন গেমার জানিয়েছেন। ওই আইডিধারীই যে মিনহাজ জামান তার এক আত্মীয় নিশ্চিত করেছেন, যিনি তাদের বাসায় আগে ভাড়া থাকতেন।

মিনহাজের বার্তায় বলা হয়, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ড্রপ আউট’ হওয়ায় হতাশ হয়ে পড়েন। একসময় নাস্তিকতায় পেয়ে বসে তাকে। তখন থেকে নিজের লজ্জা ও হতাশার কথা পরিবারের কাছে গোপন রাখতে তিনি তাদেরকে হত্যার পরিকল্পনা করতে থাকেন।
হত্যাকাণ্ডের একটি ছবির পোস্ট করে তাতে তিনি লিখেছেন, “প্রথমে আম্মু, তারপর নানী, তারপর বোন ও সবশেষে আব্বুকে হত্যা করি। সবশেষে তিনি লেখেন 'পুলিশ এসে গেছে, গুডবাই।' আগেও মিনহাজ এ ধরনের হতাশাজনক পোস্ট দিয়ে আসছিল বলে তার এই বার্তা কেউ গুরুত্বের সঙ্গে নেয়নি।


ধারণা করা হচ্ছে অপর প্রান্তে তার সাথে খেলতে থাকা বন্ধুটি পুলিশকে খবরটি জানায়। পরে পুলিশ বাড়ির সামনে থেকে সন্দেহভাজন হিসেবে মিনহাজকে আটক করে। কীভাবে এই চারজনকে হত্যা করা হয়েছে তা সোমবার সন্ধ্যা নাগাদ ইয়র্কের পুলিশ গণমাধ্যমকে জানায়নি। ঘটনার তদন্ত ও লাশের ময়নাতদন্তের পরই বিস্তারিত জানানো হবে বলে অ্যান্ডি জানান।

ইয়র্ক রিজিওনাল পুলিশের কর্মকর্তা লোরা নিকোল বলেন, “এই হত্যাকাণ্ডে আর কেউ জড়িত আছে বলে মনে হচ্ছে না। মিনহাজই এমন নৃশংসতা চালিয়েছে। তাই এলাকাবাসীর ভীত হওয়ার কোনো কারণ থাকতে পারে না।’

২০১৬ সালের ২৪ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যে সান্তা ক্লারা সিটিতে হাসিব-বিন গোলাম রাব্বি (২২) নামক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এক তরুণ গুলি করে তার বাবা গোলাম রাব্বি (৫৯) এবং মা শামিমা রাব্বিকে (৫৭) কে হত্যা করেন। রাব্বি দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর জেল-জরিমানার অপেক্ষায় রয়েছে ক্যালিফোর্নিয়ার একটি কারাগারে। রাব্বি দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন বগুড়া জেলা থেকে।


Comments

Popular posts from this blog

জয়ের ডিজিটাল বাংলা